প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এখানে সবুজ গাছপালার পাশাপাশি রয়েছে নানা প্রজাতির প্রাণি ও পাখি। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় প্রতি বছর হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে উষ্ণতা ও খাদ্যের খোঁজে এই ক্যাম্পাসে আসে নানান প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশে পাখিগুলোর নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে পারায় ইতোমধ্যে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছে জাবি ক্যাম্পাস।
সাধারণত কোকিল, দোয়েল, শ্যামা, ঘুঘু, বক ও শালিকের মতো দেশীয় পাখিগুলো সারাবছর ক্যাম্পাসে বিচরণ করে। তবে শীত আসার আগেই ক্যাম্পাসে আনাগোনা শুরু হয় পরিযায়ী পাখির। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি,খুনতে হাঁস, জিরিয়া হাঁস, ভুতি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, আফ্রিকান কম্ব ডাক, গ্রেটার স্টর্ক, ফুলুরি হাঁস, ইউরেশিয় সিঁথি হাঁস, লাল গুরগুটিসহ নানান প্রজাতি।
জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সাল থেকে এখানকার জলাশয়গুলোতে পরিযায়ী পাখি আসছে। এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ২০৪ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে দেশি প্রজাতি রয়েছে ১২৬টি ও বিদেশি ৭৮টি।
এদিকে পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ শিরোনামে জাবিতে আয়োজন করা হয় পাখি মেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ২০০১ সাল থেকে পাখি মেলার আয়োজন করে আসছে।
মেলার আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান জানান, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসীম। এর সৌন্দর্য যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে, তেমনই মানবজাতির অনেক উপকারও করে। আমাদের চারপাশের এমন অনেক কীট-পতঙ্গ রয়েছে যা পাখি খেয়ে ফেলে। কোনও একটা বনভূমি কিংবা আবাসভূমির প্রাকৃতিক অবস্থা কেমন তা নির্ভর করে সেখানে কী পরিমাণ পাখি রয়েছে তার ওপর।’
পাখি মেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বার্ড ক্লাবের উদ্যোগে ২০০১ সালে পাখি মেলার আয়োজন করা হয়। প্রথম দুই বার মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। এরপর থেকে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ পাখি মেলার আয়োজন করে আসছে। এবারের মেলা আগামী ডিসেম্বরে আয়োজন করা হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেলায় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে পাখি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবদান রাখার জন্য ‘‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’’, নতুন প্রজাতির পাখির ছবি ধারণ ও চিহ্নিত করার জন্য ‘‘বিগ বার্ড অ্যাওয়ার্ড’’ এবং পাখির ওপর সায়েন্টিফিক জার্নাল ও প্রকাশিত প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে ‘‘সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড’’ দেওয়া হয়। ’