আরেকটি আইসিসি ইভেন্টে, আরেকবার কান্না! এমন কিছুই হতে যাচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের ভাগ্যে। দুই বছর আগে লর্ডসে কাঁদতে হলেও আবুধাবিতে কাঁদতে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। ড্যারিল মিচেলের অবিশ্বাস্য এক ঝড়ে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের। ২০১৯ সালে লর্ডসের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছিল ইংলিশরা। এবারের কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসরের ইংলিশদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধটাই নিয়ে নিলো কিউইরা। ৬ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের এই জয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো কেন উইলিয়ামসনের দল।
বুধবার (১০ নভেম্বর) শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মঈন আলীর হার না মানা ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬৬ রান করে ইংল্যান্ড। ফাইনালে যেতে কিউইদের করতে হতো ১৬৭ রান। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে না পেরে ম্যাচটি কঠিন করে তুললেও শেষ পর্যন্ত ৬ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে কিউইরা। কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে এই প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলো তারা।
বুধবার জেতার পথে খুব বড় লক্ষ্য পায়নি নিউজিল্যান্ড। যদিও শুরুতে ইংলিশ বোলিংয়ের সামনে এলোমেলো হয়ে যায় কিউই টপ অর্ডার। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাজঘরে ফিরে গেলে পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে পারেননি পরের কেউই। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৮। শেষ ৬০ বলে তখনও প্রয়োজন ১০৯ রানের। ১৪তম ওভারে ডেভন কনওয়ে ৩৮ বলে ৪৬ রান করে আউট হতেই নিউজিল্যান্ডের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনার শেষ দেখে ফেলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তখনও জয়ের জন্য ৩৮ বলে প্রয়োজন ৭২ রান!
কঠিন এই লক্ষ্য ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে ড্যারিল মিচেলের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে। কনওয়ে আউট হওয়ার সময় ৩২ বলে ৩৭ রান নিয়ে ধীরস্থির ভাবে খেলতে থাকা মিচেলে হুট করেই দানব হয়ে উঠলেন। খেললেন অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যার সর্বোচ্চ রান ৩৫ বলে ৪৯। সেই ব্যাটার আজ মরুর বুকে ঝড় তুললেন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শুরুতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা ইংলিশ বোলাররা শেষে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে। ৪৮ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় মিচেল ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এছাড়া জেমস নিশামের ১১ বলে ২৭ রান জয়ের পথটা তৈরি করতে ভূমিকা রেখেছে। ১ চার ও ৩ ছক্কায় নিশাম নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে ক্রিস ওকস ও লিয়াম লিভিংস্টোন দুটি করে উইকেট নেন। এছাড়া আদিল রশিদ নিয়েছেন একটি উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটাও ভালো হয়নি। চোটের কারণে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে জেসন রয়ের। তার জায়গায় জস বাটলারের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামা জনি বেয়ারস্টো অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তারপরও তার বিদায়ের আগে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৭ রান পেয়ে যায় ইংলিশরা। অ্যাডাম মিলনের বলে উইলিয়ামসনের হাতে ধরা পড়ার আগে ১৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে বেয়ারস্টো করেন ১৩ রান।
তবে বিশ্বকাপে ব্যাটে বসন্ত চলা বাটলার আশা দেখাচ্ছিলেন। দারুণ পারফরম্যান্সে আরেকটি বড় ইনিংসের ইঙ্গিত ছিল এবারের বিশ্বকাপের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানের ব্যাটে। যদিও খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। ২৯ রানে ইংলিশ উইকেটকিপারকে থামান ইশ সোধি। এই স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ার আগে বাটলার ২৪ বলের ইনিংসটি সাজান ৪ বাউন্ডারিতে।
৫৩ রানে ২ হারানো ইংলিশদের টেনে তোলেন ডেভিড মালান ও মঈন। তৃতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ৬৩ রান। টিম সাউদির শিকারে পরিণত হওয়ার আগে মালান ৩০ বলে খেলে যান ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস। তার ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও মঈন ভুল করেননি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পেয়ে যান টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। ৩৭ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে। লিয়াম লিভিংস্টোনের ব্যাট থেকে আসে ১০ বলে ১৭ রান। আর অধিনায়ক মরগান ২ বলে অপরাজিত থাকেন ৪ রানে।
নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার অ্যাডাম মিলনে। ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। তার মতো একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাউদি, সোধি ও জিমি নিশাম। ট্রেন্ট বোল্ট ছিলেন নিষ্প্রভ, ৪ ওভারে ৪০ রান খরচ করলেও বাঁহাতি পেসার উইকেটশূন্য।