করোনার সংক্রমণরোধে সারাদেশে চলছে গণটিকা কার্যক্রম। দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ দুর্গম এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শনিবার সকাল ৯টা থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন জেলায় মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই গণটিকা কার্যক্রম। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও প্রখর রোদে পুড়ে, কোথাও বৃষ্টিতে ভিজে টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত মানুষ। এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। দেশের কোনো কোনো এলাকার গণটিকাকেন্দ্রে ছিল অব্যবস্থাপনার অভিযোগও।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, গণটিকা কার্যক্রম সফল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারপরেও প্রথমবারের মতো ক্যাম্পেইনে কিছু ভুল ত্রæটি থাকতেই পারে। তবে ভবিষ্যতে সেগুলো সংশোধন করা হবে।
প্রথম দিনে ঢাকা সিটির ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ। অনেককে দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে টিকা নিতে দেখা গেছে। তবে টিকাকেন্দ্রে এসে কেউই শারীরিক দূরত্ব মানেন নি। মাস্কহীন টিকাগ্রহীতাসহ গাদাগাদি, হুড়োহুড়ি আর অব্যবস্থাপনার চিত্রও দেখা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল গনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণটিকা কেন্দ্রে। আইডি কার্ড নিয়ে এলেই টিকা দেওয়া যাবে এমন কথা থাকলেও সকাল দশটা থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অনেকেই টিকা পাননি। আবার অনেকেই রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে এসেও টিকা পাননি এবং বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও সেটাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ টিকা নিতে আসা অনেকেরই।
রাজধানীর অন্যান্য টিকাকেন্দ্রেও দেকা গেছে উপচে পড়া ভীড়। মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, লালবাগ, মিরপুর, কাফরুল এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল থেকে শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়ায় টিকা নেয়ার জন্য।
এদিকে, রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৮৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, রাজশাহী জেলার ৭৩টি ইউনিয়নেই গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে প্রচুর সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়েছে টিকা গ্রহন করছেন বলে জানান।
বগুড়ার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌরসভার মোট ৩৫৭টি বুথে করোনার গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে ৭১ হাজার ৪০০ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সব কেন্দ্রে টিকা দিতে সকাল থেকে কেন্দ্রে ভিড় করেছেন ২৫ বছর ও তদুর্ধ্বরা।ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, বগুড়ায় ১২টি উপজেলায় ১০৯টি ইউনিয়নে ৩২৭টি, বগুড়া ও শেরপুর পৌরসভার ৩০টিসহ মোট ৩৫৭টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের একযোগে শুরু হয়েছে গণটিকাদান কার্যক্রম। দেখা গেছে, সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে ছুটে আসছে মানুষ। সবার মাঝে দেখা গেছে উৎসাহ-উদ্দীপনা।এয়ারপোর্ট পাবলিক হাই স্কুলে টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, টিকার কোন সংকট নেই। জেলায় ২২৮টি বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে। বুথগুলোতে ৪৫ হাজার ৬০০ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।
খুলনায় বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে টিকা কেন্দ্র গুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। মহানগর ও জেলার ৩০৭ টি বুথে গণটিকা দেয়া শুরু হয়েছে। খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, খুলনা জেলা ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে মোট ৩০৭টি বুথে প্রতিদিন ২০০ করে টিকা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ অনেক বেড়েছে এবং ভালই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
রংপুর জেলায় মোট ৬৫ হাজার ৪০০ জনকে টিকা দেয়া হয়। জেলার ৮টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে টিকাদান কেন্দ্রে ৩টি করে বুথ এবং প্রত্যেকটি বুথে ২০০ জনকে টিকা দেয়া হয়। রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, টানা ৭ দিন গণটিকার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রথম দিনে গণটিকাদানের পর ১৪ তারিখে দ্বিতীয় দফায় গণটিকা কার্যক্রম চলবে।
শেরপুর জেলার ৫২টি ইউনিয়নের ১৫৬ কেন্দ্র শেরপুর ও নালিতাবাড়ী পৌরসভার ১২ টিসহ ১৬৮ টি কেন্দ্রে ৩৩ হাজার ৬শ মানুষকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ৩টি করে কেন্দ্র ৯টি বুথ স্থাপন করা হবে। ৫২ ইউনিয়নে ১৫৬ কেন্দ্রে ৪৬৮ বুথে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেলে তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্রেশন করে টিকা প্রদান করা হয়। এ ৫২ ইউনয়নে ৩১ হাজার ২শ মানুষকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার৭৩টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় ৮৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে মোট ৪৬ হাজার ৮শত জনকে টিকা প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, জেলার তিনটি পৌরসভাসহ ৯ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নে একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একদিনে মোট ৪৬ হাজার ৮শত টিকা প্রদান করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। ছোট ছোট কিছু ক্রটি হচ্ছে তা নজরে আসামাত্রই সমাধান করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলার ৫টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়নের ১১২টি কেন্দ্রে একযোগে গণটিকা কার্যক্রম শেষ হয়েছে। গণটিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ। সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, গণটিকা কার্যক্রমের জন্য মৌলভীবাজার জেলায় ৪৮ হাজার ৮ শত ডোজ টিকা বরাদ্দ (সিনোফার্ম) আসে। দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে ১১২টি কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত টিকা শেষ হয়ে যায়।
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের শিবদূর গ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, উপজেলা বাদে জেলার ৬ টি উপজেলার ৪৫ টি ইউনিয়ন ও ৭ টি পৌরসভায় এই ভ্যাক্সিন প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে এবং ৭টি পৌরসভার সবকটি ওয়ার্ডের ১টি করে কেন্দ্রে এই টিকা দেয়া হবে।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা এবং ১৫টি ইউনিয়নে একযোগে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার গণটিকা কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা দেখা প্রতিটি কেন্দ্রেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপচে পড়া ভিড়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. কামরুল হাসান জানান, আমরা ফরিদগঞ্জ পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে ১টি করে ১৬টি কেন্দ্রে একযোগে টিকা প্রদান করেছি।
এছাড়া, দেশের অন্যান্য সবস্থানে সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে গণটিকা কার্যক্রম।