সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথাকথিত নিজস্ব বিধিমালাই ডিজিটাল অপরাধীদের জন্য ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে কাজ করছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোর হঠকারিতা এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তথ্য বিনিময় না করার প্রবণতা- এই দুই কারণে আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা।
আর তাই বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেরও দরকার নিজস্ব স্থানীয় আইন ও বিধিমালা।
সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে আইন প্রণয়নের বিষয়ে এমনটাই মত দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী এবং সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, যখনই ফেসবুক বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কোনো কনটেন্ট নিয়ে কিছু বলা হয়, তারা একটা জিনিস দেখায়া দেয় আমাদের। তাদের নিজস্ব কমিউনিটি গাইডলাইনস। তারা ইউরোপ আমেরিকার সমাজের জন্য নিজেদের মতো করে যে গাইডলাইনস বানিয়েছে সেটা কি আমাদের দেশে চলবে? এই সমস্যার সমাধানে দরকার আমাদের নিজস্ব আইন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর নিজস্ব গাইডলাইন বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটে উলটো অপরাধীদের জন্য একরকম ‘রক্ষাকবচ’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে এর দায় অবশ্যই অপরাধীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও নিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর স্থানীয় কার্যালয় খোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অতীতে লক্ষ্য করা গেছে, কোনো ধরনের অপরাধ বা আইনবিরোধী কাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত হলে এবং এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে তদন্তের স্বার্থে সহযোগিতা চাইলে তারা প্রায়ই তা প্রদান করতে অপারগতা প্রকাশ করতো। ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও প্রাইভেসির কথা বলে অপরাধীর তথ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো -যা কিনা প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি অন্তরায়।
বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহের নিয়ন্ত্রনে কোন আইন না থাকায় মাধ্যমগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া, রাষ্ট্রীয় আইনের লঙ্ঘনজনিত কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলে, তারা আরো অধিক মাত্রায় সচেতন হবে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট হবে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট বা আইডি খুলতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্টের মতো দলিল থাকার বিধান রাখা যেতে পারে বলেও মনে করেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সাইবার৭১ এর পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাবের। জাবের বলেন, যদিও একটু ভিন্নভাবে কিন্তু ইউরোপে এমন বিধান আছে। সেখানে কিছু বট (রোবটের সংক্ষিপ্ত রুপ) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি সম্বলিত ব্যবস্থা থাকে যেগুলো শনাক্ত করে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কেউ কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পোস্ট বা মন্তব্য করেছে কি না বা সন্দেহজনক কোন শব্দের ব্যবহার করেছে কী না। যদি এমনটা শনাক্ত হয় তখন সেই আইডিকে ভেরিফিকেশন (যাচাই) এর জন্য বাছাই করা হয় এবং আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। আইডির ব্যবহারকারীকে তখন তার জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্টের কপি বা তদ্রুপ অন্য কোন দলিল দিয়ে সেই আইডি ভেরিফাই করাতে হয়। এরপর যদি কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয় তখন সেই আইডি চালু হয়। পরবর্তীতে একই আইডি থেকে অপরাধমূলক কিছু হলে বা সন্দেহজনক কিছু হলে আইডির ব্যবহারকারীকে সহজেই ট্র্যাক করা যায়।
ভারতীয় আইটি আইন ২০০০ এর ৭৯ ধারার মত বিধান বাংলাদেশে প্রণীত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা যেমন সচেতন থাকবে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও এই মাধ্যমে আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রকাশ ও প্রচার রোধে সোচ্চার হবে।