ফেসবুক লাইভে এসে কাঁদলেন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। একই সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে মন্তব্যের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় ফেসবুক লাইভে আসেন মেয়র আব্বাস আলী। ফেসবুক লাইভে আব্বাস আলী বলেন, ‘বিবেকবান মানুষের কাছে সব এক্সক্লুসিভ কথা বলবো। দয়া করে কেউ নেগেটিভ কমেন্ট করবেন না। অনেক বিষয় উঠে এসেছে, অনেক অভিযোগ এসেছে। আজ শুধু অডিও ক্লিপটি নিয়ে কথা বলবো। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে। অথচ এটি তিন-চার মাস আগের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা কিংবা কটূক্তির দুঃসাহস আমার নেই। আপনারা অডিওটি যত্নসহকারে শুনবেন। অডিওর কোন জায়গায় জাতির পিতাকে নিয়ে আমি কটূক্তি করেছি, কোন জায়গায় অশালীন মন্তব্য করেছি? তিনি বাঙালি জাতির অহংকার, তাকে নিয়ে কটূক্তি করিনি।’
তিনি বলেন, ‘অডিওতে ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে কথা উঠেছে। তা নিয়ে কিছু কথা বলবো, কাটাখালী পৌরসভার দুটি গেট করার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড দিয়েছিলাম। তার আগে ম্যুরাল নিয়ে কারও সিদ্ধান্ত ছিল কিনা জানি না। তবে ম্যুরাল নিয়ে আমি নিজে প্রথমে ফেসবুকে জনতার মতামত চেয়েছিলাম, যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল সহকারে যে গেটটা করতে যাচ্ছি; এই সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানতে চাচ্ছি। আমি একজন মানুষ, আমি মুসলমান এবং একটি দল করি। আমাদের এখানে একটা মাদ্রাসা আছে; যার নাম জামিয়া মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসা যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ম্যুরালের কথা কীভাবে উঠেছে সে কথা বলছি। ওই মাদ্রাসার যিনি বড় হুজুর, মাদ্রাসায় জানাজা ও দাফনের কাজে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে যেতে হয়। আমি একদিন জানাজায় গিয়েছিলাম। জানাজা শেষে মাদ্রাসার যে ঈদগাহ সেখানে বসেছিলাম। আমার জানামতে, মাদ্রাসার বড় হুজুর জামাল উদ্দিন মোহাম্মাদ সন্দ্বীপির হাতে হাজার হাজার মানুষ মুফতি ও আলম হয়েছেন। সারারাত তিনি নামাজ পড়তেন। আল্লাওয়ালা একজন মানুষ। তার সঙ্গে আমি বসেছিলাম। বড় হুজুর বলেছিলেন, আপনি যে ভিডিও ফেসবুকে দিয়েছেন, তা ছাত্ররা আমাকে দেখিয়েছে। ম্যুরালের বিষয়ে কোনও পরিবর্তন আনা যায় কিনা দেখবেন।’
মেয়র আব্বাস আলী আরও বলেন, ‘বড় হুজুর অনেকভাবে আমাকে বুঝিয়েছেন। আমি একজন মুসলমান, ধর্মের কথা বললে কে-না দুর্বল হয়? আমিও দুর্বল হয়েছি। তার ধর্মীয় কথার যুক্তি অনুযায়ী আমি বলেছি, ম্যুরাল করলে পাপ হবে। ম্যুরাল করবো না। এরপর আর কখনও এমন কথা আমি বলিনি। অনেক সময় আলোচনায়, আড্ডায় বসলে নিজেদের মধ্যে অনেক কথা হয়। আমরা আড্ডায় এমন কথা বলেছিলাম। এটি ভুল হয়েছে আমার। এ জন্য ক্ষমা চাই। কিন্তু কত বড় ভুল বলেন? এ জন্য ফেসবুকে সবাই গালিগালাজ করছে। মিছিল করলো, ভাঙচুর করলো, আমার নামে আইসিটি আইনে তিনটি মামলা করলো। তবু মেনে নিয়েছি, আমি ভুল করেছি। আমাকে পবা উপজেলার দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। তবু মেনে নিয়েছি। আমার যারা ভালোবাসার মানুষ আছেন, তাদেরও বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলরকে দিয়ে জোর করে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। তাদের যা যা বলা হয়েছে, তার সব প্রমাণ আছে। কাটাখালীতে যে দোকান ছিল তা ভাঙা হয়েছে। আমার সোনামণিদের জন্য পার্ক করেছিলাম, তাও ভাঙা হয়েছে। এসব শিশু কী পাপ করলো?।’বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে মেয়র আব্বাস আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে। একই অভিযোগে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুুদ দারা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।মঙ্গলবার সকালে ফেসবুকে ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের যে অংশটা হাইওয়েতে, সিটি গেট আমার অংশে। ফার্মকে দিয়েছি তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দেবে, ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে, যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর। এটা ইসলামি শরিয়ত অনুপাতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না। সব করবো, যা কিছু আছে। খালি শেষ মাথাতে যেটা ওটা।’