সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রতিদিন নগরজুড়ে এ অভিযানে কাউকে করা হচ্ছে জরিমানা আবার কাউকে করা হচ্ছে সতর্ক।
কিন্তু এত অভিযানের পরও পেটের দায়ে দোকান খুলছেন অনেকেই।
গত ৮ জুলাই সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে লন্ড্রি দোকান খোলা রাখেন ফয়জুননেসা। সেদিন দায়িত্ব পালনকারী ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী তাকে মোবাইল কোর্টে অর্থদণ্ডের সাজা দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে দোষ স্বীকার করলেও নিজের অসহায়ত্বের কথা তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রকাশ করেন।
নগরীল আকবর শাহ থানার পূর্ব গামাপাড়ায় একটি সেলুনে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন শিবু দাশ। বাসা ভাড়া দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে দোকান খুলেছেন। শিবুও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকার করেছেন তার অসহায়ত্বের কথা।
শুধু এরাই নয় পেটের দায়ে এমন অনেকেই করছেন আইন অমান্য। দিচ্ছেন জরিমানাও। কিন্তু, সবার গল্পই করুন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী ৮ জুলাই সাজাপ্রাপ্তদের বিষয়টি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে অবহিত করেন। জেলা প্রশাসক সাথে সাথেই এসব অসহায় ব্যক্তির কাছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য পৌঁছে দিতে নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী ১৩ জুলাই তাদের প্রত্যেকের কাছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের পক্ষে সাহায্য পৌঁছে দেন এবং তাদের পাশে থাকার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গত ১ জুলাই জন সাধারনের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। লকডাউনে মানুষের জীবন-জীবিকার সংকট প্রকট হয়। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শ্রমজীবী মানুষ দোকানপাট খুলছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের এসব শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক নিজেই।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করতে আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু মানুষ হয়তো পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে দোকান খোলা রাখতে বাধ্য হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরীর অভিযানে বেশকয়েকজন দোকানি তাদের অভাবের কথা বলেন। আমি তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করি। তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের নির্দেশে গত ১ জুলাই থেকে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত চট্টগ্রাম মহানগরীতে দায়িত্ব পালন করছে। ‘দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে, সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার’- এই মন্ত্রে বিশ্বাস স্থাপন করেই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মানবিক অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।