মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারে জড়িত থাকায় রাজধানীর মিরপুর উত্তরা থেকে দুই জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এরা হলো লিটন ও তার সহযোগী আজাদ। এসময় তাদের কাছ থেকে কিছু পাসপোর্টসহ মাদকও উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নারীপাচার চক্রে সংশ্লিষ্ট বলে স্বীকার করেছে। তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রেরও সদস্য। দেশে এই চক্রের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। ৫-৭ জন সদস্য আছে ইরাকে।
চক্রটি মূলত বিশেষায়িত পেশার লোকজনকে টার্গেট করে। নার্স, বিউটি পার্লারের কাজ জানা নারী- এরাই তাদের প্রধান টার্গেট। এ পর্যন্ত দুই শ’ থেকে আড়াই শ’ তরুণকে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করেছে ওরা। পাচারকৃতদের জিম্মি করে মুক্তিপণও আদায় করে আসছে তারা।
র্যাব আরও জানায়, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে শুরু করে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, বরিশালের মানুষজন এই চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত লিটন নিজেকে ইরাকের বিশিষ্ট চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। সহযোগী আজাদের একটি ট্রাভেল এজেন্সি আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাদের পাঠানো সম্ভব প্রথমে তাদেরকে আজাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হতো।
যাদের সূত্র ধরে এ দুজনকে গ্রেফতার করা হয় সেই ভিকটিম দুই নারী রাজধানীর স্বনামধন্য একটি হাসপাতালের নার্স ছিলেন। বিদেশের প্রলোভনে পড়ে আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আজাদ তাদের বলে, বাগদাদ থেকে নামকরা এক চিকিৎসক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কথা ঠিকঠাক হলে চাকরি হবে। আজাদ পরে ওই দুই নারীকে ফোন করতে থাকে। এক পর্যায়ে সখ্যতাও গড়ে ওঠে। দু’জনকেই আলাদা করে বিয়ের প্রস্তাব দেয় আজাদ। এদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করে এবং আরেকজনকে পরে বিয়ে করবে বলে দু’জনকেই ইরাকে নিয়ে যায়।
ওদিকে, পাচারকারী চক্রে জড়িত থাকায় ইরাকেই লিটন দুবার জেল খেটেছে বলে জানা গেছে। ২০১৯ সালে দেশে আসার পর ইরাকে ফিরে যেতে পারেনি সে।
লিটনের নামে ৭টি মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে বিভিন্ন থানায়। আজাদের নামেও ৬-৭টি মামলা আছে। এর আগেও সে গ্রেফতার হয়েছিল।
২০১৬ সালে লিটনের সঙ্গে পরিচয় হয় আজাদের। তাদের দেওয়া তথ্যমতে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নারী ও পুরুষকে তারা মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করেছে। জিম্মি করা ব্যক্তিদের মুক্তিপণের টাকা আজাদের কাছে পৌঁছে দিত ভিকটিমের পরিবারের লোকজন।