বগুড়ার গাবতলীর বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের নির্বাচন শেষে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে চার জন নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিন জন।
বুধবার (০৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ইউনিয়নের কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের খোকন মন্ডলের স্ত্রী নারী ইউপি সদস্য প্রার্থীর এজেন্ট কুলসুম আকতার (৩৫), একই গ্রামের মৃত ছিফাতুল্লাহর ছেলে আবদুর রশিদ (৬০), মকবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫) ও মৃত ছহির উদ্দিন আকন্দের ছেলে খোরশেদ আলী (৭০)। গুলিবিদ্ধরা হলেন মালিয়ানডাঙ্গা গ্রামের সাবেক মেম্বার আবদুর রশিদ, একই এলাকার মেহেদী ও রাসিব।
চার জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার জানান, ‘প্রাথমিকভাবে চার জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত হয়েছি আমরা। এই চার জনের লাশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকজন আহত হয়েছেন।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ওই ইউনিয়নের ভোট গণনা না করে সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করা হলে পুলিশ ও বিজিবি গুলিবর্ষণ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক নারী ইউপি সদস্য প্রার্থীর এজেন্টসহ চার জন নিহত হন।
গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান বলেন, ‘আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা গুলিবর্ষণ করেছেন। তবে এতে কেউ নিহত হয়েছেন কিনা তা আমি জানি না। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ, একজন পুলিশ ও বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন।’
স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকালে ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালিয়াহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গণনা চলছিল। ওই কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইউনুস আলী ফকিরের বাড়ির পাশে। ভোট গণনা হলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ফল ঘোষণা করতে অসম্মতি জানান। ফল ঘোষণা না করে তারা ব্যালট বাক্স বগুড়া সদরে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা তার আত্মীয় বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকের সাকিউল ইসলাম তিতুর পক্ষ নিয়েছেন।
এতে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা ফল ঘোষণার দাবিতে সড়কে কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। শতাধিক নারী-পুরুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন এবং মারমুখি হয়ে ওঠেন। তখন দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বিজিবির সদস্যরা ২০-২৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। এতে চার জন নিহত এবং তিন জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার পর নৌকার প্রার্থীর বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালান। তারা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের গাড়ি ভাঙচুর করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বলেন, এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান বলেন, ‘আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ২০-২৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছেন। আর কিছু বলতে চাই না।’
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।