বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান-২০২২ উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নানা কারণে বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে। আমাদের সচেতনতা, কর্মনিষ্ঠায় মামলাজট হ্রাস পেতে পারে, হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বেঞ্চ গঠন করতে গেলে আমাকে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। এখনও কজলিস্টে আশির দশকের, নব্বইয়ের দশকের মামলা আসে। এরপর ২০০০ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে মামলা তালিকায় আসে।
অনেক মামলা আছে—যেটা ৪০ বছর পর্যন্ত পেন্ডিং আছে। মানুষ বিচারের আশায় আদালতে কতদিন ঘুরবে? এভাবে ঘুরতে ঘুরতে যদি একসময় মানুষ বিচারের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে বলে—এই দেশে বিচার নাই, তাহলে এটাকে কি অন্যায় বলা হবে?
‘বেঞ্চ গঠন করতে গিয়ে আমার মনে রাখতে হয়, যেই লোক বিচার পেতে বছর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরছে তাদের কীভাবে বাড়ি ফেরানো যায়। বেঞ্চ গঠনের সময়, এটা আমার মনে রাখতে হয়।
করোনার সময় অনেক বিচারপতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেঞ্চ গঠনে বেগ পেতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।
‘আশা করি আমরা কিছু দিনের ভিতরেই নতুন বিচারক পাবো। তখন হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যেভাবে বেঞ্চ গঠন করলে ভালো হয়, সেটাই আমি করার চেষ্টা করি।’
তিনি আরও বলেন, আইনজীবীদের জায়গা সংকটের পাশাপাশি আমি মনে করি—গ্রামগঞ্জ থেকে যেসব সাধারণ মানুষ বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে আসে, তাদেরও বসার জায়গা করা দরকার। এজন্য আমি যখন শপথ নিই, তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচারপ্রার্থীদের জন্য সব আদালত এলাকায় বসার জায়গা করার জন্য শেড নির্মাণের অনুরোধ করি। তিনি তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে যান। এখন কথা হলো, টাকা তো আমার হাতে থাকে না। আলাদিনের চেরাগ পেলে আমি সাথে সাথে আপনাদের দাবি পূরণ করে দিতাম। তারপরও কথা হলো, আমাদের প্রধান সমস্যা হলো জায়গার। আমাদের এখন যতটুকু জায়গা আছে তার মধ্যে আগামী ১০০ বছরের প্ল্যান করতে হবে। প্রতি ইঞ্চি জায়গা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের মহাপরিকল্পনা করে এগোতে হবে।
আইনজীবীদের ভবন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের দুঃখ-কষ্ট আমি বুঝি। এজন্য আপনাদের জন্য যতটুকু আমার করার আছে, সেটুকু করবো।
সমিতির সভাপতি মো. এহিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমির উল ইসলাম। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন—সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার, বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সারোয়ার জাহান বাদশা, সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ইমাম হোসেন।