দুই সন্তানের জন্ম নিবন্ধনে বাবা-মায়ের নাম ভুল এসেছে। সংশোধন করাতে শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর ১০ নম্বর সিটি করপোরেশনের (অঞ্চল-৪) কার্যালয়ে এসেছেন অভিভাবক।
তবে এবারই প্রথম নয়। প্রায় দুই মাস ধরে সংশোধিত জন্ম নিবন্ধনের জন্য ঘোরাঘুরি করছেন তিনি। কিন্তু কোনো সমাধান পাননি। বুধবারও (১৭ নভেম্বর) তাকে ফিরে যেতে হয়েছে।
এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই কার্যালয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলতে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার সকাল থেকে জন্ম নিবন্ধনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেক মানুষ। এর মধ্যে ফরম গ্রহণকারী কর্মকর্তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন দুই-একজন ব্যক্তি। তারা বেশিরভাগই ফরম জমা দিতে এসেছেন। এছাড়া ফরম সংশোধন ও মোবাইল ফোনে কনফার্মেশন এসএমএস না আসায় খোঁজ নিতে এসেছেন অনেকে।
চলতি মাসে জন্ম নিবন্ধনের ফরম জমা দিয়েছেন মিরপুরের বাসিন্দা করিম মিয়া। খোঁজ নিতে সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ে আসেন তিনি। দেড় ঘণ্টা ধরে নিজের ত্রুটিপূর্ণ জন্ম নিবন্ধন ফরম খুঁজেছেন।
তিনি বলেন, আমি ৪ নভেম্বর ফরম জমা দিয়েছি। এখনও আমার মোবাইলে নিবন্ধনের কনফার্মেশন এসএমএস আসেনি। এজন্য আজ খোঁজ নিতে এসেছি। এখানকার ত্রুটিপূর্ণ প্রায় ৩০০ ফরম দেড় ঘণ্টা ধরে খুঁজলাম। আমার ফরমটি পাইনি। এতে নিশ্চিত হলাম যে আমার ফরমে কোনো ত্রুটি নেই। কিন্তু ১৩ দিন হয়ে গেলেও কবে জন্ম নিবন্ধন সনদ পাবো কেউ বলতে পারছেন না।
শেওড়াপাড়া থেকে আসা এক কলেজ ছাত্রী বলেন, আমার বাবার নাম ভুল এসেছে। এটা ঠিক করতে ২০ দিন ধরে এখানে আসছি। এখনও ফরম ঠিক করতে পারিনি। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র করতে পারছি না।
সে আরো বলেন, দুই মাস আগে জন্ম নিবন্ধনের জন্য ফরম জমা দিই। তখন সব তথ্য স্ক্যান করে দিতে হতো। জন্ম নিবন্ধন আনতে যেতে হতো সদরঘাট ডিসি অফিসে। দুই-তিনদিন পর সেখানে নতুন নিয়ম করা হয়। স্ক্যান করা কোনো তথ্য নেবে না। ফরমের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। হঠাৎ নিয়ম পরিবর্তনের কারণে সেখানে হয়রানির শিকার হয়েছি। সর্বশেষ ২০ দিন হয়রানির শিকার হচ্ছি বাবার নাম সংশোধনের জন্য। একটা জন্ম নিবন্ধনের জন্য এত হয়রানি হতে হবে কেন আমাদের?
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এটি সদরঘাট ডিসি অফিস থেকে সংশোধন করা হয়। আমরা শুধুমাত্র ফরম গ্রহণ করি।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগেও সদরঘাট ডিসি অফিসে জন্ম নিবন্ধনের কপি জমা দিতে হতো। এখন মিরপুর ১০ নম্বর সিটি করপোরেশন অফিসে জমা দিতে হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি অনেক কমেছে।
তবে জন্ম নিবন্ধন ফরমের ভুলের জন্য সাধারণ মানুষদের দায়ী করেছেন তিনি। বলেন, সাধারণ মানুষ নিজের ফরম অন্যকে দিয়ে পূরণ করানোর কারণে ভুল হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (অঞ্চল-৪) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আবেদ আলী বলেন, জন্ম নিবন্ধনের চাহিদা অনেক বেশি। আমরা দ্রুত ফরম দিতে চেষ্টা করছি। আরও একটি বুথ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।