সিলেট অঞ্চলের বন্যার ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সিলেটে অকল্পনীয় বন্যা হয়েছে। সিলেট বিভাগের উজানে ভারতের মেঘালয় এবং আসামে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে তিন দিনে দুই হাজার ৫০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ১২২ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।’
বুধবার (২২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এ সময় বন্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক বন্যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত। বন্যা আমাদের জানমালের যেমন ক্ষতি করে, তেমনটি এর উপকারিতাও আছে। আমাদের পলিমাটির স্তর বৃদ্ধি করে। কৃষিজমিকে ঊর্বর এবং সতেজ করে। ময়লা-আবর্জনা-জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে সাফ করে নিয়ে যায়। এ ধরনের বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে আমাদের দেশের মানুষ অভ্যস্ত। স্বাভাবিক মাত্রার বন্যা মোকাবিলা করার সক্ষমতাও আমাদের সরকারের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নদীমাতৃক দেশ আমাদের, বন্যা নিয়ে বসবাস করতে হবে। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকি নিয়ে থাকবে হবে। সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে।’
মেঘালয় ও আসাম পাহাড়ি এলাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির পানি দ্রুত ভাটির দিকে সমতলভূমি সুনামগঞ্জ-সিলেটে প্রবেশ করে প্লাবিত করেছে। এ অঞ্চলের হাওর এবং নদীগুলোর স্বাভাবিক বন্যার পানি ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানি ধারণ এবং বহনের ক্ষমতা এসব হাওর বা নদীগুলোর নেই।’
বন্যার পানি ফুলে-ফেঁপে উঠে গ্রাম, শহর, নগর, সড়ক-মহাসড়ক প্লাবিত করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এবারের বন্যা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহতম। বিগত একশ-সোয়া শ’ বছরের মধ্যে এমন প্রলয়ঙ্কারী বন্যা এ এলাকায় হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই, সরকারেরও নেই। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কোনও সরকার সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বন্যায় যা যা করণীয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। বন্যা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও কথা বলেছি। বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো ও রান্না করা খাবার, খাবার স্যালাইন, ওষুধ সব ব্যবস্থাই করেছি। বন্যার ফলে যে রোগ হতে পারে তা মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। স্বাভাবিক মাত্রার বন্যা মোকাবেলা করার সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বন্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উদ্ধার এবং ত্রাণকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। কোনও সময় ক্ষেপণ না করে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনীকে নিয়োজিত করেছি।’
বন্যাদুর্গতদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আছি। তাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।’