বিএনপি সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের হাত ধরেই বিএনপির আমলে দেশে ‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি’র সফল বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বললে তারা একটা কথা বলেন, সাইফুর রহমান সাহেবের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব একটা স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি। আমার বন্ধু আছেন একজন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাহেব, তিনি বলেন, তার (সাইফুর রহমান) সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল, তিনি বাংলাদেশে একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনমি উপহার দিয়েছিলেন।
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এম সাইফুর রহমানের কর্মময় জীবন তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ দাবি করেন। দলের প্রয়াত এ নেতার দ্বাদশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে এ ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান সাহেব মনে করেছিলেন যে, আমি যদি এই মানুষটিকে (সাইফুর রহমান) আমার সঙ্গে পাই, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে এনে দেশকে আমরা সৃজনশীল অর্থনীতিতে পরিণত করতে সক্ষম হবো। তিনি (সাইফুর রহমান) প্রমাণও করেছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা দেশের অর্থনীতিকে সফল করার জন্য, ভালো বিষয়গুলো তুলে আনার জন্য, একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনমিক্সের প্রয়োজন আছে। সেটা তিনি (সাইফুর রহমান) করেছিলেন। ওই সময় ব্যাংকিং ও বিমা সেক্টর ছাড়াও দেশের শেয়ারবাজারে একটা ডিসিপ্লিন ছিল- এ কথাগুলো আজ আমাদের অর্থনীতিবিদরা জোরেশোরে বলছেন এবং তারা তুলনাপূর্বক সে কথাগুলোই বলছেন।
‘শুধু গার্মেন্টসে উনি থাকতে চাননি। গার্মেন্টস শিল্পকে অনেক সময় ব্যঙ্গ করে বলতেন, ‘তুমি শুধু দর্জির একটা শিল্প বানাইবা’। তিনি চাইতেন যে, এই শিল্প থেকে সারপ্লাস যে ক্যাপিটালটা আসবে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশে ভারী শিল্প তৈরি হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফেকচারিং কান্ট্রি হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। যে কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন ইপিজেডগুলোর মাধ্যমে’- এ প্রসঙ্গে যোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, এভাবে যদি দেখি- কতগুলো মৌলিক কাজ তিনি করেছিলেন। ভ্যাট প্রবর্তন করেছেন চরম বিরোধিতার মুখে, ফলে আজ বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ অনেকগুণ বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও নারী শিক্ষার উন্নয়নে তার ভূমিকা ছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় নারীশিক্ষার প্রসারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষায় দরিদ্র শিশুদের নিয়ে আসার জন্য তিনি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রবর্তন করেছিলেন। এসব ছিল তার সৃজনশীল পদক্ষেপ।
প্রয়াত এ নেতা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সাইফুর রহমান সাহেবের ওপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আস্থা ছিল, জিয়াউর রহমান সাহেবের আস্থা ছিল, গোটা জাতির একটা আস্থা ছিলে। ১২ বার তিনি সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আজকের বাংলাদেশ রাতারাতি ‘ভালো বাংলাদেশ’ হয়ে যায়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পার্থক্যটা এখানে যে, তিনি সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট নিতে চাননি, তিনি ঋণে আবদ্ধ হতে চাননি, ঋণে ডুবে মরতে চাননি। যে কারণে অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্যে ধীরে ধীরে আগে খুঁটিটা শক্ত করে দেশের অর্থনীতিকে ওঠাতে চেয়েছেন। সেজন্য স্লো যেতে চেয়েছেন। আমরা তার কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব এম কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউস এবং প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।