নারায়ণগঞ্জের দুটি সংসদীয় আসনের দুই সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও একেএম সেলিম ওসমানের পরিবারের পূর্বপুরুষ ও বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ কবরে কবরস্থানের পাশের শ্মশান থেকে পোড়া মাটি এনে কবর ঢেকে দেওয়াসহ কবরের উপর দিয়ে কবরস্থানে চলাচলের রাস্তা তৈরি করেছে কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।
সোমবার (৯ আগস্ট) এ খবর পেয়ে দুপুরে কবরস্থানে ছুটে যান শামীম ওসমান।
তিনি সেখানে গিয়ে এ অবস্থা দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসময় তিনি কবরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিতে আনতে সেখানে দায়িত্বরতদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেন। এসময় শামীম ওসমান তাদের কাছে জানতে চান একইভাবে তাদের পরিবারের প্রয়াতদের কবরে যদি শ্মশানের পোড়া মাটি দেওয়া হয় তাহলে সেটা তারা মানবেন কিনা, উত্তরে সকলেই ‘না’ জানিয়ে কাজটি সঠিক হয়নি বলেন।
শ্মশানের মাটি দেওয়া হয়েছে শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব এম. ওসমান আলী, দাদী জামিলা ওসমান, বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, মা নাগিনা জোহা ও বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমানসহ ওসমান, একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকগুলো সাধারণ কবরে। অনেক কবরের অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে এই পোড়া মাটিতে চাপা পড়ে। কিছু কবরের চিহ্ন রয়েছে।
এসময় শামীম ওসমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাকে ও আমার পরিবারকে ধৈর্য্য ধরার শক্তি দেন। আমি গত ২৭ জুলাই মেয়র আইভীর মা ও আলী আহমদ চুনকা সাহেবের স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে এখানে আসি। তখন দেখেছিলম শ্মশানের সংস্কার কাজ চলছে এবং এখানে মাটি পড়ে আছে। তখনও আমার বাবা মা দাদা দাদী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ঠিকঠাক ছিল। এখন এই জায়গা তিনফুট উচু। আজকে আমার মনে হচ্ছে আমি একজন ব্যর্থ সন্তান।
‘যারা এ কাজটা করেছেন বা করিয়েছেন তাদের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা, কী লাভ হল এটা করে। আমারা বাবা মা ভাই মারা যাওয়ার পর আমার যেমন কষ্ট হয়েছিল আজকে তার চেয়ে কোনো অংশে কম কষ্ট হচ্ছে না। ‘
তিনি বলেন, এখানে আমার পূর্ব পুরুষের কবর। আমরা এর সংস্কার করি ঠিক করি। সবাই যার যার পরিবারেরটা করে। আমি ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করেছি এটা তার কার্যাদেশে ছিল কিনা। সে বলেছে ছিল না। তাহলে এ কাজটা করল কে। একজন আরেকজনের দোষ দিচ্ছে।
শামীম ওসমান বলেন, হিন্দু ধর্মের যারা মৃত্যুবরণ করতেন তাদের মরাদেহ দাহের পরে এই পানিতে ফেলা হত। সেই শ্মশানের মাটি দিয়ে কবরগুলো ভরা হয়েছে। আমার বাপ দাদার কবর আমার পারমিশন ছাড়া আপনি সংস্কার করবেন কেন।
‘আমি গাড়িতে একা একা বসেছিলাম। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি সরকারকে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলতে চাই, দয়া করে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না। আমি জানি জনগণের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা কতটুকু। এই অমানবিক কাজের ফলেই আল্লাহ আযাব দিচ্ছেন। যারা এই কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা। ‘
এটা টেস্ট কেস। তারা চেষ্টা করছে আমার মাথা গরম করে দেয়ার জন্য। আমি তাদের বলতে চাই আমার মাথা গরম হবে না। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করি। এই সমস্ত পাপীদের আমি কেয়ার করি না।
তিনি বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ করবো দয়া করে কবরগুলোকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন। শুধু আমার পরিবারেরটা না। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাদেরটাও।
কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর ও উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার মামুন জানান, এটা উচিত হয়নি। আমি মাটিগুলো বাইরের সড়কে রেখেছিলাম। এটা তারা ভরাট করে চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবরস্থান মসজিদের ইমাম বদরশাহ জানান, কবরস্থানে শ্মশানের মাটি দেওয়া সমীচীন নয়। এখানে ধর্মীয় বিষয় না তবে এটা মানবিক দিক থেকেই উচিত নয়। আমি মসজিদে নামাজ পড়াই ও দোয়া করি। এ বিষয়টি আমি দেখভাল করিনা। তবে নাপাক মাটি কবরে দেওয়া উচিত নয়।
মসজিদের মোয়াজ্জিন ও কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাকারিয়া জানান, এটা শ্মশানের মাটি কিনা আমি নিশ্চিত না। ঠিকাদাররা শ্মশান ও কবরস্থানের উন্নয়ন কাজ করেছে।
শামীম ওসমানের ছাড়া এখানে থাকা একাধিক কবরের স্বজনরা খবর পেয়ে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এ ঘটনায় নাসিকের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই স্থানে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পূর্ব পুরুষদের কবরও রয়েছে আর তাই অন্য কবরগুলোর প্রতি এহেন আচরণ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কেউ।