পুলিশ সদস্যদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে ঘা হিসেবে উল্লেখ করে তার চিকিৎসা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের ‘হল অব ইন্টেগ্রিটি’তে পুলিশ সদস্যদের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করে আইজিপি এ কথা বলেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্প্রতি যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আমরা ইচ্ছা করলে বিভাগীয় ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারতাম। তা না করে আমরা ঘাকে ব্যান্ডেজ না করে তা চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। সো দ্যাট, এই বাহিনী যেন পরিষ্কার থাকে। ইচ্ছে করলেই এগুলো ব্যান্ডেজ করা যেত, কিন্তু আমরা ব্যান্ডেজের মধ্যে নেই।’
তিনি বলেন, ই-অরেঞ্জ নামক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে বনানী থানায় কর্মরত একজন পুলিশ পরিদর্শকের সম্পৃক্ততার তথ্য আমরা পেয়েছি। সম্প্রতি তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আমরা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। ভারতের সঙ্গে যেহেতু আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে তাই তাকে ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন কিছু হবে না। পুলিশ সদর দপ্তর তাকে ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে। ওই পরিদর্শক চাকরিবিধি লঙ্ঘন ও ফৌজদারি অপরাধ করে থাকলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিভোগ করবেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. বেনজীর আহমেদ আরো বলেন, বনানী থানায় কর্মরত ওই পুলিশ পরিদর্শক অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। ভারতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আমাদের এখানেও তার বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। ভারত তার প্রসিকিউশন সম্পন্ন করে আমাদের কাছে দিতে হয়তো কিছুটা সময় নেবে। সরকারি চাকরির কিছু বিধি ও শর্ত আছে। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে সেটা প্রতিপালন একজন পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব। আমরা আসামি হিসেবেই তাকে (ওই পরিদর্শক) ফেরত আনব।
আইজিপি বোট ক্লাবের সভাপতি থাকার বৈধতার প্রশ্ন তুলে একজন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘সংসদের বলা কোনো বক্তব্যের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই।’ পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাহিনীতে যারা নিজ কর্মকাণ্ডের জন্য বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল হতে অতিরিক্ত আইজি পর্যন্ত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে বছরে ন্যূনতম একবার সাত দিন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২ লাখ ১৮ হাজার ১২০ জনের বিশাল এই বাহিনীর মৌলিক ট্রেনিংয়ের বাইরে এই প্রশিক্ষণ বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ। প্রশিক্ষক তৈরি করা, প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ও ধরন সফলভাবে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের পুরো বাহিনীকে এক সপ্তাহ করে ট্রেনিং দিতে কমপক্ষে ৪৮ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে। এই প্রশিক্ষণে সদস্যদের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সারদাসহ দেশে পুলিশের ১০৮টি ট্রেনিং সেন্টারে এই ট্রেনিং দেওয়া হবে। কনস্টেবল থেকে শুরু করে অতিরিক্ত আইজি পর্যন্ত সবার জন্য আদালা আলাদা প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন হলে আশা করছি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের ধনী দেশে আধুনিক পুলিশ হিসেবে রূপ লাভ করবে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) মাজহারুল ইসলাম বলেন, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ পরিকল্পনাসহ প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা তৈরির জন্য গঠিত তিনটি কমিটি পদমর্যাদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ চাহিদা নির্ধারণ করে। তারা প্রত্যেক পদমর্যাদার জন্য একাধিক প্রশিক্ষণ কোর্সেও মডিউল হতে অনুমোদিত কোর্সের সিলেবাস এবং কোর্স মডিউল কনটেন্ট তৈরি করা হয়।
এএসপি এবং তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি (বিপিএ), সারদা, রাজশাহীতে, সাব-ইন্সপেক্টর হতে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বিপিএ, টিডিএস, টিটিএস, এসটিএস, পিএসটিএস সব পিটিসি ও ডিএমপি ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে। কনস্টেবল, নায়েক এবং এএসআই পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের তত্ত্বাবধানে দেশের ১০৮টি পুলিশ ইউনিটের প্রশিক্ষণ ৫৫ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে পুলিশের সব অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি ও সরাসরি উপস্থিত ছিলেন।