চলতি অধিবেশনকে বাজেট অধিবেশন না বলে পদ্মা অধিবেশন নামকরণে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পদ্মা সেতুকে স্বাধীনতার পর দেশের সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবকাঠামো উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তো আমরা পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলবো না কী নিয়ে কথা বলবো? আমরা কি উনার (রুমিন ফারহানা) কাপড়-চোপড় নিয়ে কথা বলবো? আমি তো তা করবো না।’
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাজেট নিয়ে রুমিন ফারহানার ছাটাই প্রস্তাবের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। আগের দিন রুমিন বলেছিলেন, চলতি অধিবেশনকে পদ্মা সেতু অধিবেশন বা বিএনপি অধিবেশন বলা যায়।
রুমিন ফারহানার আগের দিনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা নাকি এখানে (সংসদে) খালেদা জিয়াকে বকাবকি করি। আমরা নাকি পদ্মা সেতু নিয়ে বেশি বেশি কথা বলছি। এটা নাকি ছিল সংসদের কাজ। আমরা এই সংসদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আলাপ করেছি। পদ্মা সেতু অবকোর্স বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট অ্যাচিভমেন্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দেওয়ার পরে যদি কোনও ঐতিহাসিক তৎপর্যপূর্ণ স্থাপনা হয়ে থাকে, সেটা হচ্ছে পদ্মা সেতুর অবকাঠামো। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। তো আমরা পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলবো না কী নিয়ে কথা বলবো? আমরা কি উনার (রুমিন ফারহানা) কাপড়-চোপড় নিয়ে কথা বলবো? আমি তো তা করবো না।’
পরে জননিরাপত্তা বিভাগের বরাদ্দের ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দেন রুমিন ফারহানা। তিনি বলনে, ‘যুক্তিবিদ্যার সবচেয়ে বড় ফ্যালাসি হচ্ছে যখন কোনও যুক্তি থাকে না, তখন ব্যক্তিগত আক্রমণ করা। যখন যুক্তি থাকে না, তখন ব্যক্তিগত আক্রমণ আসে। উনি যুক্তি না পেয়ে আমার পোশাক নিয়ে আলোচনা হবে কিনা, এমন অভব্য বক্তব্য দিয়েছেন— যা আমরা আইনমন্ত্রীর কাছে আশা করি না। প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। এই বক্তব্য পুরো সংসদের জন্য লজ্জার।’
এদিকে ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনার জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এখানকার আসনে বসে বলছেন— নির্বাচন হয় না। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, উনি সংসদে গেলেন কীভাবে? এর জবাব উনি দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভোট কীভাবে হয়েছে তা আমরা দেখেছি। ওই সময় কারও ভোটকেন্দ্রে যাওয়া লাগতো না। ভোট হয়ে যেতো। ‘আজিজ মার্কা’ নির্বাচন কমিশন তাদের (বিএনপি) ছিল। মাগুরার ভোটের কথাও সবাই জানে। ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি কী করেছে। এগুলো কি উনারা ভুল গেছেন।’
এরপর নির্বাচন কমিশন আইন তৈরির প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এখন বিএনপির দাবি হচ্ছে— তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে। তাহলে উনারা ভোটে আসবে। এই সংসদে দাঁড়িয় দ্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্ববধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছে। উচ্চ আদালতের এই রায়ের এক সুতাও বাইরে সরকার যাবে না। কারণ, বর্তমান সরকার আইনে বিশ্বাস করে। আইনের শাসনে বিশ্বাস করে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বার বার বলছে— তাদেরকে নির্বাচনে আনতে হবে। তারা কি পাকিস্তানে থাকে, যে সেখান থেকে ডেকে আনতে হবে? তারা তো বাংলাদেশে থাকে। বাংলাদেশে হয় নির্বাচন। উনারা নির্বাচন করতে চাইলেই নির্বাচন করতে পারে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের যে জন্য প্লেয়িং ফিল্ড দরকার সেটা করা হবে। আর এর পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন। সেটা করা হয়েছে।’
বিএনপির নেতারা নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ ছাটাই করে এক টাকা দেওয়ার প্রস্তাবের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন,‘ উনারা বলেছেন এক টাকা দিতে। উনারা পারবেন একটাকা দিয়ে কোনও নির্বাচন করে দিতে? পারবে না। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের টাকা লাগবে। নির্বাচন কমিশন তার অর্থ ব্যয়ে পুরোপুরি স্বাধীন।’
অবসরের দুই দিন আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীনের বিদেশ সফর বিষয়ে রুমিনের অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশের আমন্ত্রণে মন্ত্রী মহোদয় এবং সচিব টিম নিয়ে ডেল্টা প্ল্যান বিষয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। তারা সেখান থেকে শিখে এসেছেন। এটা হয়েছে বিদেশি সরকারের ব্যবস্থাপনায়। আর তখন তিনি সচিব ছিলেন। এখানে কি কোনও অন্যায় আছে? জানি না, উনি কোথা থেকে অন্যায় দেখলেন।’
আইন মন্ত্রী দাবি করেন, বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ নির্বাচন এবং ২০১৮ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ শেখ হসিনাকে নিরঙ্কুশ মেজরিটি দিয়ে পাস করিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিশ্বোর কোথাও বোধহয় নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয় না। কারণ, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। যার কারণে হয়তো আধা শতাংশ, এক শতাংশ ভুল থাকে।’