নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ছয় দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় প্রতীক ‘নৌকার পক্ষে নামার’ অনেকটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান।
তবে মেয়র পদে মাঠে থাকা নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম একবারও উচ্চারণ করেননি প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য, যার সাথে রয়েছে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বৈরথ।
আগামী ১৬ জানুয়ারির ভোট সামনে রেখে পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই চলছিল, তার মধ্যেই সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম।
তিনি বলেন, “এখানে আওয়ামী লীগের মূলধারার সবাই আছেন। আমি এতদিন নামি নাই। মানে, নামতে পারি নাই। আজকে থেকে নামলাম।”
একজন এমপি হয়ে সরাসরি নৌকায় ভোট চাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধার কথা তুলে ধরে শামীম বলেন, অনেকে নৌকা নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, শেখ হাসিনার ঘাঁটি। এখানে অন্য কোনো খেলা খেলার চেষ্টা করবেন না।
”এখানে কে প্রার্থী, হু কেয়ারস। কলাগাছ, না আমগাছ- সেটা দেখার বিষয় না। এটা বঙ্গবন্ধুর নৌকা। নৌকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “এখন আমাদের জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। একে-অপরকে দোষারোপ করে ভোট হয় না। ভোট করতে হয় ভালবাসা দিয়ে।”
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে আইভী-শামীম দ্বন্দ্ব বহু দিনের। ২০১১ সালের নির্বাচনে শামীমকে হারিয়ে প্রথম মেয়র হন আইভী। এবারের নির্বাচনে আইভীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকার; যিনি বিএনপির প্রতীক ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন।
নির্বাচনের জমজমাট প্রচারের মধ্যে আইভী তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকারকে ‘ওসমান ভাইদের’ প্রার্থী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও তৈমুর দাবি করেছিলেন, তিনি ‘জনগণের প্রার্থী’, কারো সঙ্গে তার ‘পারসোনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ নেই।
এই দুই প্রার্থীর এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর গত শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছিলেন, তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এর জবাব দেবেন।
দুদিন পর সংবাদ সম্মেলনে এসে শামীম ওসমান স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি আপনার মত কথা বলতে থাকেন। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু হাতি দিয়া নৌকা ডুবাইবেন এই চিন্তা কইরেন না। এই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আমার মনে হয় না, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ওই ক্ষমতা আছে যে নৌকাকে ডুবায়ে দেবে।”
“হাতি সাইজে বড় হতে পারে; আমরা হাতি কাঁধে নিয়ে দৌড় দেব, কিন্তু নৌকার উপরে হাতিরে উঠতে দিয়েন না”, নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
নির্বাচনের প্রচার চলাকালে এভাবে সংবাদ সম্মেলনে আসার জন্য এই আইনপ্রণেতা নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘ক্ষমা’ চান।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের পরিবেশ তুলে ধরে শামীম ওসমান প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন এলে তিনিই কেন বারবার ‘সাবজেক্ট’ হন? ঠাট্টা করে বলেন, ”আমি কেন সাবজেক্ট হই সবসময়। ব্যাপারটা গরিবের বউ, সবার ভাবীর মত।”
নির্বাচনের প্রচারের সময় নিজে চুপ থাকলেও তা নিয়ে কথা হয় মন্তব্য করে শামীম বলেন, “আমি সত্য বলতে পছন্দ করি। তবে এখানে সব সত্য বলতে পারব না। এজন্য বিবেকের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
“এই কয়েকদিন আমি চুপ ছিলাম। আমি চুপ থাকার কারণে অনেক ইস্যু তৈরি হয়। ইস্যু তৈরি হলে এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেউ উল্টোপথে হেঁটে দলের ক্ষতি করছেন। আবার কেউ দলের সঙ্গে হেঁটে দলের ক্ষতি করছেন।”
আপনাকে গদফাদার কেন বলা হয়- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘কারো যদি ইচ্ছে হয় আমাকে গদফাদার বলতে তো বলবেন। দুই দিন আগে ইচ্ছে হয়েছে ফাদার বলতে, বলেছেন। তিন দিন আগে মনে হয়েছে ব্রাদার বলতে, বলেছেন। তবে যে যাই বলেন, গডমাদার বইলেন না। কারণ আমি পুরুষ মানুষ। এসব গালি শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই এসবে আমি এখন ড্যাম কেয়ার।’
উল্লেখ্য, নাসিক নির্বাচনে শামীম ওসমান প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ নির্বাচনে আইভীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।