চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে নিলামের জন্য রাখা গাড়ি বিক্রির কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় বন্দরের তিন কর্মচারীসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
টানা দুইদিন ঢাকার ফুলবাড়িয়া, উত্তরা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ছয়জন হলো- মো. মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল, মো. মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন, মো. আনোয়ার হোসেন, নুরুল আবছার, রুহুল আমিন ও মো. ইউসুফ।
এদের মধ্যে নুরুল আবছার চট্টগ্রাম বন্দরের সিকিউরিটি গার্ড, রুহুল আমিন ও মো. ইউসুফ ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে অস্থায়ী পিয়ন হিসেবে কর্মরত বলে জানিয়েছে সিআইডি। মো. মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল, মো. মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন ও মো. আনোয়ার হোসেন প্রতারক চক্রের সদস্য।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সিআইডির পক্ষ থেকে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়।
সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ জানান, বন্দরে নিলামের জন্য রাখা গাড়ি বিক্রির কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় টানা দুইদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নুরুল আবছার চট্টগ্রাম বন্দরের সিকিউরিটি গার্ড, রুহুল আমিন ও মো. ইউসুফ ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে অস্থায়ী পিয়ন হিসেবে কর্মরত এবং মো. মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল, মো. মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন ও মো. আনোয়ার হোসেন প্রতারক চক্রের সদস্য।
মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ জানান, গাড়িচালক শাহিনুর রহমান হালিম চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিলামে গাড়ি কেনার জন্য তার বন্ধু রুবেলের সঙ্গে আলোচনা করেন। তখন রুবেল শাহিনুর রহমান হালিমকে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আনোয়ার হোসেন শাহিনুর রহমান হালিমকে মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন তখন শাহিনুর রহমান হালিমকে জানান- ‘কাস্টম অফিসার’ মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল তার মামা হন। পরে মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন শাহিনুর রহমান হালিমকে নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে আসেন।
তিনি জানান, শাহিনুর রহমান হালিমের কাছে মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল নিজেকে ‘সহকারী কাস্টমস কমিশনার’ সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াতের পিএস হিসেবে পরিচয় দেন। পরে মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল বন্দরের পিয়ন ইউসুফের সঙ্গে চুক্তি করে বন্দরের ভেতরে প্রবেশের জন্য। ইউসুফ সিকিউরিটি গার্ড নুরুল আবছার ও পিয়ন রুহুল আমিনের সঙ্গে চুক্তি করে শাহিনুর রহমান হালিমের বন্ধু আমিনুল ইসলামকে নিয়ে বন্দরে প্রবেশ করে এবং একটি ‘এক্স নোহা ২০০৫ মডেল’ এর গাড়ি দেখায়।
মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ জানান, শাহিনুর রহমান হালিম গাড়ি কিনতে রাজি হলে ১২ জানুয়ারি মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন হালিমকে নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের পেছনে সোনালী ব্যাংকের গেইটে সহকারী কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দেওয়া সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াতের কাছে নিয়ে যান। সেখানে সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াতের প্রাইভেট কারে বসে ১০ লাখ ১৯ হাজার টাকা হালিমের কাছে থেকে গ্রহণ করেন তারা। এ সময় সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াত বাদি হালিমকে জানান- গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করা হচ্ছে এবং ৪ নম্বর গেইট থেকে গাড়ি বুঝে নিতে পারবে।
পরে টাকাগুলো নিয়ে তারা হোটেল আল-ফয়সালে চলে যায়। সেখানে সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াত, মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল ও মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন টাকাগুলো ভাগ করে নেয়। এর মধ্যে মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুল পায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমন পায় ২ লাখ টাকা এবং বাকি টাকা পায় সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াত। বন্দরে প্রবেশ বাবদ ইউসুফকে মোট ৬৬ হাজার টাকা দেয় প্রতারক সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াত। আনোয়ার হোসেন শাহিনুর রহমান হালিমের সঙ্গে মোবারক হোসেন প্রকাশ সুমনের পরিচয় করিয়ে দিয়ে পায় ৫০ হাজার টাকা। যোগ করেন বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ।
মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, সহকারী কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দেওয়া সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াত প্রতারক চক্রের মূলহোতা। সাখাওয়াত বিভিন্নজনের মাধ্যমে লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়। সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াত ডবলমুরিং থানার একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
তিনি জানান, সানোয়ার হোসেন প্রকাশ সাখাওয়াত ও তার চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন শাহিনুর রহমান হালিম। মামলাটির তদন্তভার সিআইডির কাছে আসলে অভিযান চালিয়ে প্রথমে মহিদুল ইসলাম সরকার প্রকাশ নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার কাছ থেকে অন্য আসামিদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়।