দেশের মানুষ অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ‘এখন ভালো আছে’ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে।
রোববার (৬ মার্চ) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি, তখন স্লোগান দিয়েছি- শ্রমিকের বেতন হতে হবে সাড়ে তিন কেজি চালের মূল্যের সমান। কারণ তখন একজন শ্রমিক যে বেতন পেত সে একদিন কাজ করে তিন কেজি চালও কিনতে পারত না।
“যারা কমিউনিস্ট পার্টি করতেন, তারাও স্লোগান দিত, সাড়ে ৩ কেজি চালের সমান এক দিনে শ্রমিকের মজুরি হতে হবে। আজকে একজন শ্রমিক চট্টগ্রামে ৮০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। আর দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৫০০ টাকার নিচে মুজরি নেই।”
মন্ত্রী বলেন, “মোটা চালের কেজি ৪১-৪২ টাকা। সেটা হিসাবে করলে ১২-১৫ কেজির বেশি চাল কিনতে পারে একজন শ্রমিক একদিনের মজুরির টাকায়।
“ঢাকায় একজন রিকশাচালক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক বেলা কাজ করলে ১ হাজার টাকা আয় করতে পারে। সে ইচ্ছে করলে একদিন রিকশা চালিয়ে অন্যদিন বসে থাকতে পারে।”
‘দেখতে হবে ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে কিনা’
পৃথিবীতে সব সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, “১৯৪০ এর দশকে এক আনা মানে ১৬ পয়সা… ব্রিটিশ আমলে এক আনা মানে ৬ পয়সা ছিল। সেই এক আনায় কয়েক কেজি চাল পাওয়া যেত। কিন্তু মানুষ লাখে লাখে না খেয়ে মারা গেছে।
“গত কয়েক দশকে সমস্ত পৃথিবীতে খাদ্যদ্রব্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। ভারতে বেড়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকায় বেড়েছে, ইউরোপে বেড়েছে, ইউকেতে বেড়েছে, সমগ্র পৃথিবীতে বেড়েছে। বাংলাদেশেও বেড়েছে, তবে তাদের তুলনায় সে রকম নয়। দেখতে হবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে কি না।”
গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে বেড়ে ২৬০০ ডলারে উন্নীত হওয়ার তথ্য দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪ গুণ বেড়েছে। আর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটা অন্য আয়ের মানুষেরও। প্রতিটি মানুষের ভ্যগ্যের উন্নয়ন হয়েছে।”
তারপরও দেশের মানুষকে ‘বিভ্রান্ত করতে’ বিএনপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান বলেন, “তারা মানুষকে অতীতে কিছু দিতে পারেনি। তারা দুর্নীতিতে বার বার চ্যম্পিয়ন হয়েছে, হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশে সমান্তরাল সরকার তৈরি করেছে। সমস্ত ব্যবসার উপর টোল বসিয়েছিল। এটিই দিতে পেরেছে তারা, এর বাইরে কিছু দিতে পারেনি।”
তার ভাষায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য আর তারেক জিয়ার শাস্তির মধ্যে আটকে থাকা রাজনীতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা দেখাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। তারা এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সারা দেশে সমাবেশের আয়োজন করছেন।
“আজকে গ্রাম দেশে হারিকেন দেখা যায় না, হারিকেন আর কুপিবাতি এখন দেখা যায় না। এগুলো ড্রয়িং রুমে সাজিয়ে রাখতে হয়। গত দশ বছরে কৃষিতে যে উন্নয়ন হয়েছে, হালের বলদ আর গরুর হাল এখন আর বাচ্চারা দেখতে পায় না, চিনে না। কারণ গরুর হাল নাই, এটাই পরিবর্তন।
“মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা এগুলো দেখেও দেখে না। আজকে দেশের প্রতিটি মানুষ ভালো আছে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য কর্মসূচি পালন করছে।”
মন্ত্রী বলেন, “সবাইকে অনুরোধ জানাব, আজকে দেশ উন্নত হয়েছে কুড়ে ঘর এখন কবিতায়, পায়ে চলা মেঠু পথ খুঁজে পেতে কষ্ট। এই যে পরিবর্তন, যে ছেলে ১২ বছর আগে বিদেশে গেছে সে দেশে এসে ঢাকা শহর চিনতে পারে না। গ্রাম চিনতে পারে না। গ্রামের একটি ছেলে আর শহরের ছেলের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। এই যে পরিবর্তন এটি শেখ হাসিনার কারণে।”
জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ‘৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, বিশ্বের শেষ্ঠ ভাষণ” শীর্ষক আলোচনা সভায় আওওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কবি মুহাম্মদ সামাদ বক্তব্য দেন।