অবশেষে কক্সবাজার শহরের খুরুশকুল ব্রিজ সংলগ্ন কস্তুরাঘাটের বাঁকখালী নদীর তলদেশ দখল করে গড়ে উঠা ২৫০টির বেশি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে দখলমুক্ত করা হয়েছে নদীর ২৫০ একর জায়গা। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারি অন্যান্য সংস্থা এক যৌথ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে।
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্বদানকারী কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশমতে ব্রিটিশ আমলের (১৯২৯ সাল) রিভিশনাল সার্ভে (আরএস) মতে নদীকে রক্ষা করার জন্য উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। আগামিকালও (আজ) অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
তিনি জানান, দখলবাজরা নানা ধরনের কাগজপত্র দেখিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বাঁকখালী নদীর তলদেশ ও তীরবর্তী শত শত একর জমি দখল করে আসছিল। এ জমি বিআইডাব্লিউটিএ-কে বুঝিয়ে দওয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কোনভাবেই নদী দখলের প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ.ন.ম হেলাল উদ্দিন জানান, তিন-চার দশক আগেও বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে স্টিমার ভিড়ত। এমনকি এক দশক আগে সেখানে জাপানি একটি পরিবেশবাদী সংগঠন প্যারাবনের সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দখলবজারা সেই প্যারাবন কেটে নদীর তলদেশ ভরাটের পর গড়ে তোলে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি। কৌশলে নেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগও। গত এক বছরে এক হাজার একর প্যারাবন উজাড় করা হয়েছে। নদী তীরের ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলে। তিনি জানান, কক্সবাজার শহরের বর্ধিত এলাকা খুরুশকুল হচ্ছে এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সরকার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতে ব্রিজ নির্মাণ করছে। দখলের কারণে নদী হারিয়েছে নাব্যতা। সেই সাথে হারিয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে দুপুর ১টার দিকে উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধা দেয় তালিকাভুক্ত শতাধিক দখলদারের অন্যতম ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত মহেশখালী দ্বীপের শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক। এ সময় উক্ত চেয়ারম্যান ও তার নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একদল লোক সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান বলে সংবাদকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। হামলায় কয়েকজন সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন কলেও জানান তারা। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালেক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি দলিলমূলে নদী তীরের জমিতে রয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বিষয়ে জানান, আবদুল খালেক চেয়ারম্যান হচ্ছেন নদী দখলদার তালিকার অন্যতম ব্যক্তি। তার বেশ কয়েকটি অবৈধ ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ পেয়েছেন বলেও জানান।