‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিকেই এখন বিএনপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জিয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকালে জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পনের পর বিএনপি মহাসচিব দলের ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে জনগনের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজকে নির্বাচন হয় না, নির্বাচন কমিশন একটা সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পুরো প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সার্বিক অর্থে একটি ছদ্মবেশী একদলীয় স্বৈরাচারী ব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি ৪৩ বছর সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে এবং সংগ্রাম-লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আজকে ৪৩ বছর পার করে ৪৪ বছরে পড়েছে। এখন বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা এবং গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আজকে আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৫‘শ অধিক আমাদের নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, এই অবস্থার পরও বিএনপি আজকে নিসন্দেহে নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সীমিত পরিসরের মধ্যেও বিএনপি তার কাজগুলো করছে।”
‘‘আমরা যখন সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি তখন আমাদের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনিও অসংখ্য মিথ্যা মামলা নিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন। আজকে তার নেতৃত্বে আমাদের দল অত্যন্ত সুসংগঠিত। আমরা এই সীমিত পরিসরের মধ্যেও আমাদের দলকে সংগঠিত করছি এবং রাস্তায় জনগনের যে দাবি-দাওয়া আছে তা নিয়ে আন্দোলন করছি। আমরা আশা করি, সামনের বছর এবং তার পরের বছরও নিসন্দেহে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখতে পারবো তাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে।”
একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে জিয়াউর রহমান দেশে একটি বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূল কাঠানো নির্মান, মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালু, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্কার প্রভৃতি কার্য্ক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার শত্রুরা যখন জিয়া্উর রহমানের হত্যা করেছিলো তিনি সাহাদাত বরণ করেছিলেন। তার পরে সবাই ভেবেছিলো যে, বিএনপি বোধহয় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তার যোগ্য উত্তারাধিকারী গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পতাকাকে তুলে ধরেছিলেন, তিনি দীর্ঘ ৯ বছর আপোষহীনভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়েছেন।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘জাতির দুর্ভাগ্য যে, আজকে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলা হয়। আমরা পরিস্কারভাষায় বলতে চাই, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে তিনি অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত। তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে, মুক্তি শুরু হয়েছে।সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না।”
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আকম মোজাম্মেলন হক চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন এই কবরে জিয়ার মরদেহ আছে কিনা-এরকম প্রশ্নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ উনাকে(আকম মোজাম্মেলক হক) উনার চ্যালেঞ্জ নিজেকে গ্রহন করতে বলেন। উনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ওটা উনি প্রমাণ করুক। লেট হিম প্রুফ দ্যাট হি ওয়াজ এ ফিড্রম ফাইটার।”
সকাল ১১ টায় দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এই সময়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সা্বেক সাংসদ অবসরপ্রাপ্ত আক্তারুজ্জামান, মহানগর বিএনপির উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিনের রফিকুল আলম মনজু, যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পস্তবক অর্পন করেন। এ সময়ে দলের স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু ও ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক উপস্থিত ছিলেন।