সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ নিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে সরকার। সরকারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তারা যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে যেকোনও সময়ে নির্ধারিত মেয়াদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে তার আগে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বারবার অবহিত করারও উদ্যোগ নেবে সরকার।রবিবার (৩১ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন সংশ্লিষ্টরা। এ সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা কমিটির সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুজব প্রতিরোধ ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে সবাই একমত পোষণ করেন। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যারা মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মন্ত্রিসভা কমিটিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যারা মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তাদের শনাক্ত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসার কার্যক্রম চলমান আছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। এই সংস্থাটির পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজব ও সংঘটিত সব ধরনের সাইবার অপরাধ রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সেগুলো মনিটরিং করার পাশাপাশি কাউন্টার কমেন্ট করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রাফিক্স এবং ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনগণের সামনে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। রাষ্ট্রবিরোধী, মানহানিকর ও জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ব্লক বা অপসারণ করার জন্য নিয়মিত বিটিআরসিকে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী অপপ্রচার, সেনা বিদ্রোহের উসকানি দেওয়াসহ রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।
গুজব প্রতিরোধের বিষয়ে বিটিআরসি থেকে জানানো হয়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া গুজব সংক্রান্ত লিংক ও কনটেন্টগুলো অপসারণের কাজ অব্যাহত আছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যারা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, আমরা তাদের (সোশ্যাল মিডিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো দেই। বর্তমানে তারা সেসব অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না। তারা উদাসীনতা দেখাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কোনও অফিস বাংলাদেশে নেই। গুজব ও সাইবার প্রতিরোধে তাদের কাছে বিভিন্ন সময় সরকার সুপারিশ করে থাকে। কিন্তু তারা সেসব সুপারিশ শুনছে না। তারা যে শুনছে না, এটা আমরা পাবলিকলি প্রচার করবো।’তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জানানো হবে যে তারা আমাদের অভিযোগগুলো যথাযথভাবে আমলে নিচ্ছে না। এসব অপরাধ ও গুজব বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়নি। এ জন্য আগে তাদের বারবার বলা হবে। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। তারপরও যদি না হয়, তাহলে সরকার অ্যাকশনে যাবে। যাতে বিশ্ববাসীর কাছে মনে না হয় বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার ব্যাহত হচ্ছে। যদি কখনও সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ হয় সেটার দায় যাতে সরকারের ওপর না পড়ে। তারপর প্রয়োজন হলে কিছু সময়ের জন্যে এসব (সোশ্যাল মিডিয়া) বন্ধ করে দেওয়া হবে।’