মঙ্গলবার সকালে থেকে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ময়মনসিংহ মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। একই চিত্র চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান, সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট কম থাকলেও যানবাহনের সংকটে পড়ে মানুষের ভিড় বেড়েছে কয়েক গুণ। সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পয়েন্টে থেমে থেমে যানজট দেখা দেয়।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে মাওনা হাইওয়ে পুলিশের ২০ জন সদস্য কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না।
তবে দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
এক যাত্রী বলেন, তিনি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সকাল ৬টায় চন্দানা চৌরাস্তা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
তিনি বলেন, “বাসা থেকে বের হয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও বাস না পেয়ে খোলা ট্রাকে উঠেছি। জনপ্রতি ভাড়া প্রায় ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ট্রাকে উঠেছি।”
ভোরে রাজধানী ঢাকার মহাখালী থেকে রওনা হয়েছেন বলে জানালেন ময়মনসিংহগামী সোনার বাংলা পরিবহনের চালক জানান, বেলা ১১টায় তিনি রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এসে পৌঁছেছেন। মহাসড়কের বনানী, কাকলি, আব্দুল্লাহ্পুর, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর বাইপাস পার হতেই তার অনেক সময় চলে গেছে।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এলাকার বাসিন্দা মো. জুলহাস।
তিনি বলেন, ভোর পৌনে ৫টায় চন্দ্রায় এসে পৌছেছেন। গাড়ি না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা আফতাব হোসেন বাড়ি যাওয়ার জন্য গাড়ি না পেয়ে গরু নিয়ে এসে ফেরত যাওয়া একটি ট্রাকে উঠেছেন।
তিনি বলেন, “সড়কে গাড়ির অভাব নেই। কিন্তু আমাদের যাওয়ার মত কোনো গাড়ি নাই। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকে যেতে হচ্ছে।”
একই ট্রাকের ছিলেন আলমাস হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি যাবেন বগুড়া। ট্রাক ছাড়া যাওয়ার কোনো উপায় পাচ্ছেন না। বাসের সমান ভাড়া দিয়ে ট্রাকে করে যাচ্ছেন।
গাজীপুর শহরের ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা আক্কাস মিয়া বলেন, তিনি চাকরি করেন স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে যাওয়ার জন্য ভোরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দাঁড়িয়ে আছেন।
“সোমবার কারখানা ছুটি হয়েছে। তাই সকালে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার গিয়ে দেখি শত শত ঘরমুখী মানুষ গাড়ির জন্য ভিড় করছেন। আমিও প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। গাড়িতে উঠতে পারছি না।”
গাজীপুরের শিমুলতলী যাওয়ার জন্য রফিকুল ইসলাম সায়েদাবাদ থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুর পরিবহনের বাসে ওঠেন। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় তিনি যানজটে পড়েন বলে জানান।
তিনি বলেন, “বেলা দেড়টার দিকে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় পৌঁছাই।”
সকালে গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রীদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কোনাবাড়ির সালনা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মীর গোলাম ফারুক বলেন, “সোমবার বিকেল থেকেই চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভীড় ও যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে যাত্রীর চাপ রয়েছে কিন্তু গাড়ি কম।”
তাছাড়া চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় যানজট হয় বলে জানান গাজীপুর সিটির ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মেহেদি হাসান।
তিনি বলেন, “ আমাদের মূল সমস্যা বিআরটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ। তারপরও আমরা যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। মহাসড়কে হঠাৎ হঠাৎ যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তখন কিছুটা যানজট হয়। যানজট নিরসনের পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া মোবাইল টিম দায়িত্বে আছে।
“সকালে বৃষ্টির কারণে রাস্তায় টঙ্গী থেকে জয়দেপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেলে গাড়ি ধীরগতিতে চলতে গিয়ে গাড়ির লম্বা লাইন সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের মাঝখানের বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে এবং দুইপাশে স্থানে স্থানে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় মহাড়কের পুরো অংশ ব্যবহার করতে পারছে না গাড়িগুলো।”