সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ এই মামলা দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ শাখার উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, এস কে সিনহা ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহা অসৎ উদ্দেশ্যে বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন। সেসব অপরাধলব্ধ অর্থ নিজেদের ভোগ দখলে রেখে তার অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান গোপন করে বা এর ছদ্মাবরণে পাচার করেন। ওই অর্থ বিভিন্ন সময় ভাই অনন্ত কুমার সিনহার আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে ২ লাখ ৮০ হাজার ইউএস ডলার স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাচার করেছেন এস কে সিনহা। তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, মামলাটি তদন্তকালে অপরাধের সঙ্গে অপর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে সম্প্রতি কানাডা, আমেরিকা, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে তার সম্পদের তথ্যের জন্য চিঠি দেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এই চিঠির জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এস কে সিনহার তিন তলা বাড়ি কেনার রেকর্ডপত্রাদি পায় দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, এস কে সিনহার ভাই অনন্ত কুমার সিনহা আমেরিকায় একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ২০১৮ সালের ১২ জুন আমেরিকার একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন। এছাড়া একই সময়ে তিনি ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার দিয়ে অপর একটি বাড়ি কেনেন। নিউজার্সির ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার একটি হিসাবে (নং-৮৫৮০৩৩৭৫) ওই বছরেরই ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। এছাড়া একই বছরের ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ১০ ডলার জমা হয়। এসব অর্থ ইন্দোনেশিয়া এবং কানাডার রয় এ গ্রুপের কাছ থেকে পাওয়া বলে ব্যাংকের নথিপত্রে বলা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, অনন্ত কুমার সিনহা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০ ডলারের একটি ক্যাশ চেক সংগ্রহের জন্য তার বড় ভাই এস কে সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে যান। এ সময় এস কে সিনহা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি ক্রয়ের জন্য তিনি বন্ধুর কাছ থেকে ফান্ড পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, এস কে সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ টাকা অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় আমেরিকায় পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। সেই অর্থ দিয়েই নিউ জার্সির প্যাটারসন এলাকার ১৭৯ নম্বর জ্যাপার স্ট্রিটে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার দিয়ে বাড়িটি ক্রয় করেন।