ই-ভ্যালির পর এবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিকানা পরিবর্তনসহ কর্তৃপক্ষের কোনো খোঁজ না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ই-অরেঞ্জের ক্রেতারা। বিক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য অনেক পণ্যের বিপরীতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অর্ডার নেওয়ার পর ই-অরেঞ্জের মালিক ও কর্মকর্তারা লাপাত্তা। তাই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও এখন তাদের দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়। নিরূপায় হয়ে সোমবার ( ১৬ আগষ্ট) দিনভর ক্রেতারা বিক্ষোভ করেছেন ই-অরেঞ্জের গুলশানের কার্যালয়ের সামনে।
জানা গেছে, গত ১১ জুলাই ই-অরেঞ্জের মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমান মালিক বিথী আক্তার। কিন্তু গ্রাহকরা বর্তমান ও সাবেক মালিক সোনিয়া মেহজাবিন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরইমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে সাবেক মালিক সোনিয়া মেহজাবিন মালিকানা পরিবর্তন করে বিদেশে চলে গেছেন। তবে গ্রাহকরা এর কিছুই জানে না।
জানা যায়, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত অরেঞ্জ বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি অন্যতম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ অনলাইন শপ। এটি ২০১৮ সাল থেকে ঢাকা শহরে অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যসেবা দিয়ে আসছে।
চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ থেকে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা সিটিতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে এবং এর কয়েক দিন পরই সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তখন অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের অপারেশন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মালিক পক্ষের কাউকে।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে অফিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ই-অরেঞ্জ তাদের ফেসবুকে পেজে পোস্ট করে অভিযোগ করেছে, গত ১৬ আগস্ট থেকে ডেলিভারি তালিকা প্রকাশের লক্ষ্যে ১১ আগস্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু করলেও কয়েকজন রিসেলার অফিসে এসে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি ও কর্মকর্তাদের রুমে বন্দি করে রাখাসহ গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করে। ফেসবুক পোস্টে তারা জানায়, রিসেলারদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা অফিস ত্যাগ করেননি। পরে, গুলশান থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রিসেলাররা অফিস ত্যাগ করেন। তবে, অফিস বন্ধ থাকলেও ১৬ তারিখ ডেলিভারির তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ডেলিভারির তারিখও অপরিবর্তিত রাখা হবে।
একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, আমি গত এপ্রিল মাসে ই-অরেঞ্জে তিনটি বাইক অর্ডার করি, তাদের নিয়মঅনুযায়ী ৩৫ দিনের ভেতরে আমার বাইক পাওয়ার কথা থাকলেও ১০০ দিনের বেশি হয়ে গেলেও আমি আমার পণ্য পাইনি। এখন তাদের অফিসে এসে কোনো সঠিক তথ্য পাচ্ছি না। পণ্যটি কবে পাবো সে ব্যাপারেও তারা কোনো কিছু বলছে না। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।
এদিকে ই-অরেঞ্জের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ- তিনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থাকায় তারা আস্থা রেখে ই-অরেঞ্জে টাকা দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেকে পোস্টও দিয়েছেন।
মাশরাফিকে উদ্দেশ্য করে একজন গ্রাহক লিখেছেন, আপনার প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস এবং আস্থা আছে। বাংলাদেশে ইঅরেঞ্জ নামক ই-কমার্স আছে অনেকেই জানতাম না। শুধু আপনাকে অ্যাম্বাসেডর দেখে আমরা আস্থার সঙ্গে ইঅরেঞ্জ থেকে বিভিন্ন মডেলের হাজার হাজার যুবক বাইকের অর্ডার করি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে গত মে মাস থেকে এই পর্যন্ত সকল অর্ডারকৃত বাইকের ডেলিভারি বন্ধ রেখেছে শুধু লকডাউনের অজুহাতে। যেখানে অন্য ই-কমার্স তাদের ডেলিভারি নিয়মিত রেখেছে। এখন ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ডেলিভারির জন্য লম্বা সময় চাচ্ছে। এটি দুঃখজনক। এই অবস্থায় আমরা আপনার সদয় সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে ই-অরেঞ্জের পক্ষ থেকে সোমবার বিকালে ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই তার সঙ্গে যেন কেউ যোগাযোগ না করে।
একই পোস্টে ই-অরেঞ্জ ১৯ আগস্ট থেকে মোটরসাইকেল ছাড়া সব পণ্য সরবরাহ শুরু করবে বলেও জানায়।
সার্বিক বিষয় নিয়ে ই-অরেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কারো সঙ্গে কথা বলার সম্ভব হয়নি।