আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ যমুনা। বাজারে ইভ্যালির বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় এ সিদ্ধান্তে এসেছে তারা। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, একটি পক্ষ যমুনা গ্রুপকে ভুল বুঝিয়ে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।
যমুনা গ্রুপ জানতে পেরেছে ইভ্যালির ভেতরে সমস্যা বেশি। ভালো কোনও অডিট ফার্ম প্রতিষ্ঠানটির অডিট করতে চায় না। ইভ্যালির নেটওয়ার্ক ছাড়া কিছুই নেই। এমন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে যমুনা গ্রুপের রেপুটেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যমুনা গ্রুপ। অবশ্য এখন পর্যন্ত যমুনা গ্রুপ একটি টাকাও বিনিয়োগ করেনি বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
জানা যায়, যমুনা গ্রুপ ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনাও ছিল। বর্তমানে নানা সমস্যায় থাকায় ইভ্যালির ৫১ শতাংশ শেয়ারও কিনতে চেয়েছিল যমুনা গ্রুপ। কিন্তু অবস্থা বিবেচনায় গ্রুপটি এসব পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। তারা নিজস্ব ই-কমার্স কোম্পানি নিয়ে আসছে। আর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন ইভ্যালির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানানো হবে।
গত ২৭ জুলাই ইভ্যালির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, যমুনা গ্রুপ ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেছিলেন, ‘আমাদের পাশে যমুনা গ্রুপকে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যমুনার এই বিনিয়োগ ইভ্যালির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ব্যয় করা হবে।’
যমুনা গ্রুপের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রুপের পরিচালক (কমার্শিয়াল) শামসুল হাসান জানান, ‘ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার চিন্তা করেছিলাম, যেখানে ২০০ কোটি টাকা করেছি। কিন্তু পরে আমরা তাদের কাছে সব ডকুমেন্ট চেয়েছিলাম, তাদের যেসব হিসাব তা বোঝা মুশকিল। ৩০ টাকায় জিনিস কিনে ১৫ টাকায় বিক্রি করা কীভাবে সম্ভব এটা আমাদের মাথায় আসে না।’
তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, ফলসের (মিথ্যা) ওপর ব্যবসা করে তাদের চেয়ে বেটার ব্যবসা ই-কমার্স ফরম্যামেটে আমরা নিজেরাই করতে পারি। সেটা যমুনা মার্ট বা হোলসেল মার্ট হতে পারে। আমরা চিন্তা করছিলাম, কোম্পানিটি (ইভ্যালি) ভালো হলে আমরা কিনে নেবো। পরে তাদের রেপুটেশন দেখলাম তাতে কোম্পানিটি কেনার মতো নয়। তারপরও আমরা তাদের ওখানে অডিট করবো, এরপর বিষয়টা জানাবো।’
অবশ্য যমুনা গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং, সেলস অ্যান্ড অপারেশনস) ড. মোহাম্মদ আলমগীর আলম তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, ‘ইভ্যালিতে যমুনা গ্রুপের বিনিয়োগের পূর্বে ইভ্যালির গ্রাহকদের ও পণ্য সরবরাহকারীদের পাওনা বা দায় দেনা নির্ধারণের লক্ষ্যে যমুনা গ্রুপের উদ্যোগে অডিট চলছে। যেহেতু এখনো অডিট কার্যক্রম শেষ হয়নি ও অডিটের চূড়ান্ত রিপোর্ট যমুনা গ্রুপের হাতে এখনো আসেনি, তাই ইভ্যালিতে বিনিয়োগের বিষয়ে যমুনা গ্রুপ এখনো চূড়ান্ত কোনো অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিতে প্রস্তুত নয়। অডিট শেষ হলে যথাসময়ে যমুনা গ্রুপ তার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত ও বিস্তারিত কর্মপদ্ধতি মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করবে।’
এ বিষয়ে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে, এ বিষয়ে ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে দেয়া এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল জানান, বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেকোন মন্তব্য সব সময়ই সেনসিটিভ। আমরা শুধু আপনাদের কাছে সময় চেয়েছি যেন ইভ্যালিতে বিনিয়োগ এনে সবার প্রতি কমিটমেন্টগুলো দ্রুততার সাথে রাখতে পারি। বিনিয়োগ পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।আমার অনুরোধ এই রকম একটা সেনসিটিভ বিষয়ে লিখিত কোন স্টেটমেন্ট ছাড়া কোন মিডিয়া যেন নিউজ না করেন। আমারা সবসময়ই বলে আসছি আমাদের কমিটমেন্ট দেওয়া সময়ের মাঝেই সকল পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি করব ইনশাল্লাহ।