ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় রাতে মডেলদের নিয়ে পার্টি ও বিদেশে প্লেজার ট্যুরের আয়োজক শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও তার সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে (৩৯) অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা উভয়েই সদ্য গ্রেপ্তারকৃত বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
বুধবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় র্যাবের মুখপত্র খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও তার এক সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে (৩৯) গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাবের মুখপত্র জানান, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড’ সম্পর্কে জানা যায়। এরপরই গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) এবং তার সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১টি অস্ত্র, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১৩,৩০০ পিস ইয়াবা, ১টি ফেরারি গাড়ি, সিসার সরঞ্জামাদি, ২টি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট এবং ভারতীয় ৪৯ হাজার ৫০০ জালমুদ্রা।
র্যাবের মুখপত্র খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য প্রায় ১০/১২ জন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে।
অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশ নিতো। এছাড়া বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করতো। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরণের পার্টি আয়োজন করতো। তারা ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে অপব্যবহার করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের চাহিদা বা পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি আয়োজন করতো তারা। গ্রেফতারকৃতরা তাদের এই অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় (গাড়ির ব্যবসা, আমদানি ও গরুর ফার্ম ইত্যাদি) বিনিয়োগ করেছে। এই ব্যবসায় তাদের গ্রুপের সদস্যদের অবৈধ আয়েরও বিনিয়োগ রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান নামি-দামি ব্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবসা করে থাকে। সে বিলাসবহুল গাড়ী আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। সে নিজেও দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি ব্যবহার করতো। ২টি রেঞ্জ রোভার, অ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন ও ফেরারিসহ ৫টি গাড়ি রয়েছে তার।
গ্রেফতারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেফতার হয়েছিল। তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত অপরাধীদের যোগাযোগ রয়েছে।
জানা যায়, রাজধানীর উপকণ্ঠে ডেইরি সান নামের একটি গরুর ফার্মের আড়ালে মিশু দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও অস্ত্রের কারবারে জড়িত। মিশু একসময় রাজধানীতে পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিলেন। পিয়াসা ও মিশুর অপরাধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।