করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ নিয়ে সরকার জনগনের সাথে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে যে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।
আজ রবিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব অভিযোগ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে যে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। করোনা টিকা নিয়ে সরকার যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে লেজে গোবরে করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, চীনের সিনোফার্ম ও কোভ্যাক্স প্ল্যাট ফার্ম থেকে মোট ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৬২০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করেছে।”
তিনি বলেন, “কিন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আকুল আহবান’ বিজ্ঞাপনে দেড় কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের কথা বলায় প্রমাণিত হয়েছে সরকার করোনার শুরুর প্রথম থেকেই জনগনের সাথে প্রতারণা করছে, টিকা মূল্য নিয়েও মিথ্যাচার করছে। অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগনের সামনে প্রকাশ করতে হবে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দিলেও ২ বছর দুই মাস লাগবে। অথচ এখন পর্যন্ত টিকা প্রাপ্তির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার দিতে পারছে না অথবা টিকা প্রাপ্তির উতস্য সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।”
তিনি বলেন, “সরকারের নিজস্ব দুর্নীতি পরায়ন মহলকে সহায়তা করার জন্যই টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষন ও বিতরণের ক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো রোড ম্যাপ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগনের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রতারনা করা হচ্ছে। অযোগ্যতা ও দুর্নীতিপরায়নতা এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী। এই সকল দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। শুধু মিথ্যাচার করে জনগনের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সরকারের নেই।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের লকডাউন লকডাউন খেলা আর মর্মান্তিক তামাশা। প্রথমে লক ডাউন, তারপরে কঠোর লকডাউন, পরে শিথিল লকডাউন ঈদের ১ দিন পর থেকে আরো কঠোর লকডাউন, শিল্প কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা থেকে মনে হয়, সরকারি সিদ্ধান্ত গুলো সবই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে।”
তিনি বলেন, “এইসব পরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষ, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, মাঝি, বাইকের চালকেরা, পরিবহন শ্রমিকেরা। বিএনপির বার বার এসব মানুষের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের আহবান জানিয়েছিলো কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বিএনপি আবারো দাবি জানাচ্ছে এসব মানুষদের জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হোক, ছোট ব্যবসায়ীদের পূঁজির ব্যবস্থা করা এবং দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হোক।”
দেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় করোনা বেড,অক্সিজেন, আইসিইউ বেড বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের আহজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গাছের তলায়, অ্যাম্বুলেন্সে অথবা ভ্যানের ওপর রোগীর চিকিতসার দৃশ্য কি মধ্য আয়ের বাংলাদেশ বা উন্নয়নের মডেল বাংলাদেশের ছবি দেখায়।”
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য আবারো স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উধর্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণ করা উচিত বলে স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে বলে জানান মহাসচিব।