প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে সব ধর্মের নাগরিকদের অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। প্রত্যেকটি এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের নজরদারি বাড়াতে হবে এবং শান্তি সম্মিলন, শান্তিমিছিল, শান্তিসভা করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কোনো রকমের সংঘাত দেখা না দেয়। কারণ, এই মাটিতে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর ২০২১) বিকেলে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত ‘অফিস ভবন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
করোনার শিক্ষা ‘যতই সম্পদ হোক দুঃসময়ে তা কাজে লাগে না’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, মানুষ মরে গেলে এই সম্পদ পড়ে থাকবে, তা কোনো কাজেই আসবে না। কাজেই যত বেশি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করতে পারব সেটাই জাতির পিতার এবং ইসলামের শিক্ষা। আর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছে মানুষের সেবার জন্য, সে কথাও মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে।
সরকার দেশের বেদে শ্রেণি, তৃতীয় লিঙ্গ, এমনকি কুষ্ঠরোগীদের জন্যও ঘর-বাড়ি করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেভাবে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাদের সেবা করতে হবে। জাতির পিতার ডাকে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষ কাঁধে অস্ত্র তুলে নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এই স্বাধীনতাকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুমিল্লায় যে ঘটনাটি ঘটে গেছে, সেটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। কারণ, মানবধর্মকে সম্মান করাই ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার রয়েছে, তেমনি অন্যের ধর্মকেও কেউ হেয় করতে পারে না। এটা ইসলাম শিক্ষা দেয় না। আর নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। আর অন্য ধর্মকে হেয় করা হলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, কুমিল্লার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আমরা সেটাই দেখব। আমাদের পবিত্র কোরআন শরিফকে অবমাননা করেছে অন্যের ধর্মকে অসম্মান করতে গিয়ে। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার যার নিজের ধর্মের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। আর একটি কথা, আইন কেউ হাতে তুলে নেবে না। কেউ যদি অপরাধ করে, সে যে-ই হোক, সে অপরাধীদের বিচার হবে। আমাদের সরকার সে বিচার করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। কাজেই আমাদের সবারই সেই কথা মেনে চলতে হবে এবং জানতে হবে, তাহলেই সঠিক শিক্ষা আমরা পাব। প্রত্যেকটি ধর্মই শান্তির বাণীর কথা বলে, সকলেই শান্তি চায়। কাজেই এই বাংলাদেশে আমরা একটা অসম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি, যেখানে সকলের ধর্মের সাথে আমাদের সম্প্রীতি থাকবে এবং এই সম্প্রীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। কেননা যুগ যুগ ধরেই এ দেশে সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে আসছে।
শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, সেখানে কোনো ধর্ম দেখে নয়, যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের রক্তের সঙ্গে সকল ধর্ম একাকার হয়ে মিশে গেছে। আর এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ সকল ধর্মের, সকল বর্ণের এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষই একটা মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে চলবে।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি অনুষ্ঠানে কুমিল্লা প্রান্ত থেকে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু এই অনুষ্ঠানে নবনির্মিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।